আমাদের চারপাশে অনেক বিনিয়োগকারী আছেন, যারা বিশ্বাস করেন ব্যাংকে টাকা রাখা একেবারেই ঝুঁকিমুক্ত। তাদের কাছে “সেফটি” সবথেকে মূল্যবান। এ বিষয়ে আমি কিছুটা একমত হলেও পুরোপুরি একমত নই। কারণ ঝুঁকি সম্পর্কে তাদের ধারণা আসলে কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
ঝুঁকি—একটি আপেক্ষিক শব্দ
“ঝুঁকি”
শব্দটি আপেক্ষিক। যা একজনের কাছে
ঝুঁকিপূর্ণ, তা হয়তো অন্যের
কাছে নিরাপদ। তবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে
সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো
ক্রয় ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা। অর্থাৎ, আজ যে জিনিস
কিনতে পারছি, ভবিষ্যতে যদি সেটা আর
কিনতে না পারি, সেটাই
প্রকৃত ঝুঁকি।
আলোচনাটি
সহজে বোঝাতে একটি উদাহরণ ধরি।
রামবাবু, রহিম বাবু এবং
অসীম বাবু—তিনজনেরই হাতে
১০০ টাকা আছে। আজ
চালের দাম যদি প্রতি
কেজি ৫০ টাকা হয়,
তাহলে তিনজনই দু’কেজি চাল
কিনতে পারবেন। কিন্তু তারা আজ চাল
না কিনে সেই ১০০
টাকা ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রাখলেন।
দশ বছর পর কী
হতে পারে, তা দেখা যাক—
রামবাবু:
তিনি তার টাকা আলমারিতে
রেখে দিলেন। দশ বছর পরে
তিনি চাল কিনতে গেলে
দেখবেন, সেই ১০০ টাকায়
এক কেজিরও কম চাল পাবেন,
কারণ চালের দাম তখন অনেক
বেড়ে গেছে।
রহিম বাবু: তিনি টাকা ব্যাংকে
ফিক্সড ডিপোজিট (এফডি) করেছেন। সুদ-আসল মিলিয়ে
তিনি নিশ্চিতভাবে ১০০ টাকার চেয়ে
বেশি টাকা পাবেন। কিন্তু
চাল কিনতে গেলে দেখা যাবে,
তিনি দু’কেজি চালের
থেকেও কম পাবেন।
অসীম বাবু: তিনি তার টাকা
মিউচুয়াল ফান্ড বা অন্য কোনো
বিনিয়োগে ব্যবহার করেছেন। দশ বছর পরে
দেখা যাবে, তার বিনিয়োগ থেকে
এমন পরিমাণ টাকা এসেছে, যা
দিয়ে তিনি ৩/৪ কেজি চাল কিনতে
পারবেন।
এখান
থেকেই স্পষ্ট, ব্যাংকে টাকা রাখলে ঝুঁকি
থাকে না—এই ধারণা
পুরোপুরি ভুল।
ব্যাংক
এফডি: ভালো না খারাপ?
আমি
কখনোই বলছি না যে
ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট খারাপ। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবস্থা
টিকে রয়েছে, এর মানে এর
কিছু ভালো দিক রয়েছে।
কিন্তু এর কিছু সীমাবদ্ধতাও
আছে।
ভালো
দিক:
- ব্যাংক এফডি সম্পূর্ণ নিরাপদ।
- বাজারের ওঠাপড়ার প্রভাব এফডি-তে পড়ে না।
খারাপ
দিক:
- ইনফ্লেশন (মূল্যস্ফীতি): ইনফ্লেশনের ফলে টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। ফলে এফডি থেকে প্রাপ্ত সুদ প্রায়ই ইনফ্লেশনের তুলনায় কম থাকে।
- দীর্ঘমেয়াদে এফডি মূলধনের প্রকৃত মূল্য রক্ষা করতে পারে না।
বিনিয়োগের
ক্ষেত্রে ঝুঁকি ও সম্ভাবনা
বিনিয়োগ
বিশেষত মিউচুয়াল ফান্ডে, স্বল্প মেয়াদে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হতে পারে।
তবে দীর্ঘমেয়াদে এর তুলনায় নিরাপদ
বিকল্প খুব কমই আছে।
বিনিয়োগের
মাধ্যমে আপনি শুধু আপনার
মূলধন রক্ষা করতে পারবেন না,
বরং তা বহুগুণে বৃদ্ধি
করতে পারবেন। দীর্ঘমেয়াদে মিউচুয়াল ফান্ডের ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে এটি মূল্যস্ফীতির
চেয়েও বেশি রিটার্ন দিতে
সক্ষম।
সঠিক
সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়
মিউচুয়াল ফান্ড বা ব্যাংক এফডি—যেটিই বেছে
নিন, তা আপনার আর্থিক
লক্ষ্য, সময়কাল এবং ঝুঁকির প্রতি
মনোভাবের উপর নির্ভর করে।
তবে এই একটি বিষয়
স্পষ্ট—আর্থিক পরিকল্পনা করার সময় শুধুমাত্র
সুরক্ষা নয়, ক্রয়ক্ষমতার বিষয়েও
ভাবা উচিত।
অর্থাৎ,
সেফটি এবং রিটার্নের মধ্যে
একটি ভারসাম্য খুঁজে বের করাই একজন
সফল বিনিয়োগকারীর আসল চ্যালেঞ্জ।
Thanks for highlighting. It is likely to help the investors in general
ReplyDeleteFD is only better than keeping money idle in home locker.
ReplyDeleteExcellent comparison, would help investors to choose according to need.
ReplyDelete