KUNTAL
CHAUDHURI
CERTIFIED
FINANCIAL PLANNER
M-
9433240927
দুটি ছোট্ট সাম্প্রতিক ঘটনা দিয়ে আলোচনাটা শুরু করা যাক।মলয় বাবু (পরিবর্তীত কাল্পনিক নাম) আমার অতিপ্রিয় এক ক্লায়েন্ট। কোন এক পাব্লিক সেক্টর কোম্পানিতে উচ্চ পদে চাকরি করেন।মানুষ হিসাবে সত্যিই তিনি অসাধারন। উনার পোর্টফোলিও রিভিউ করার জন্য
আলোচনায় বসেছি। পোর্টফোলিও রিটার্ন 19% এর কাছাকাছি – 2008 সাল থেকে আজ পর্যন্ত। বিভিন্ন আলোচনার ফাঁকে মলয় বাবু কিছুটা আব্দারের সুরে বলে উঠলেন
– “কুন্তল বাবু আপনিতো সবকিছুই খুব সুন্দরভাবে পরিচালনা করেনশুধু রিটার্নটা আরেকটু বেশী পেলে খুব ভালো লাগতো।মানে………………….”।
দ্বিতীয় ঘটনাটি হলো – আমি এক নতুন ক্লায়েন্টের সাথে দেখা করতে গেছি।দুই একটি কথা বলার পর উনি জানতে চাইলেন 40% -45% রিটার্ন তিনি আগামী 5 বছরের জন্য প্রত্যাশা করতে পারেন কিনা। প্রত্যুত্তরে সম্ভবতঃ না বলায় তিনি কিছুটা বিরক্ত হয়েই বললেন – এই সামান্য রিটার্ন টুকুও না পেলে রিস্ক নিয়ে ইক্যুউটি মার্কেটে বিনিয়োগ করে কি লাভ?
দুটি ঘটনাই আপাতঃ দৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে হলেও বাস্তবে কিন্তু তা নয়। মলয় বাবুর বেশী রিটার্ন প্রত্যাশা করা কি অপরাধ নাকি দ্বিতীয় ভদ্রলোক 40% রিটার্ন প্রত্যাশা করে খুব অন্যায় করে ফেলেছেন? কেউ হয়তো বলতে পারেন এঁদের চাহিদা বেশী কিন্তু বিজ্ঞান বলে আমাদের মস্তিষ্কইতো এমন ভাবে তৈরী!
জীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই আমরা খুব end result বা ফলের দিকে নজর দিই কিন্তু কি করে সেই ফল পাওয়া গেলো তা খুব একটা দেখার চেষ্টা করিনা।যেমন Sachin Tendulkar অসাধারন ব্যাটসম্যান –কিন্তু কি করে তিনি নিজেকে এই অসাধারন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন তা আমরা খুব একটা জানার বা বোঝার চেষ্টা করিনা। ইক্যুউটি মার্কেটে বিনিয়োগ করার আগে বা পরে আমরা খুবই SENSEX বা NIFTY ইত্যাদি নানান্ ধরনের সূচককে লক্ষ্য করে থাকি। কিন্তু অনেকেই এটা বোঝার চেষ্টা করিনা প্রকৃত কি কারনে ( root cause) দীর্ঘকালীন সময়ে SENSEX বা NIFTY এগিয়ে চলে।
ইক্যুউটি মার্কেটের Short term গতিপ্রকৃতি নির্ভর করে নানান বিষয়ের উপর ( Fundamental / Technical / Political / Liquidity ইত্যাদি )। কোন এক নির্দিষ্ট বছরে বৃষ্টি বেশী বা কম হলে বাজারে তার প্রভাব পড়ে থাকে। অন্য কোন দেশ তাদের কোন নীতি পরিবর্তন করলে বাজারে তারও প্রভাব পড়তে পাড়ে। তাই ছোট বড় নানান্ বিষয়ের উপর নির্ভর করে short term এ বাজারে উথ্বান পতন ঘটে থাকে। মূলতঃ এই কারনগুলির জন্যই সকলকে short term এ ইক্যুউটি বিনিয়োগ থেকে দূরে সরে থাকতে উপদেশ দেওয়া হয়। আমরা সাধারনতঃ বলে থাকি - SHORT TERM EQUITY INVESTMENT IS
JUST LIKE A COIN TOSS – আপনার জেতার ও হারার সমান সম্ভাবনা – যা আপনার ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু শুধুই ভাগ্যর উপর নির্ভর করে কোথাও সাফল্য পাওয়া যায়না – স্বভাবতই এটিও তার ব্যতিক্রম নয়।
তাহলে long-term এ ইক্যুউটি মার্কেট কিসের উপর ভিত্তি করে এগিয়ে চলে? আর কেমন রিটার্নই বা প্রত্যাশা করা যেতে পারে আগামী 10-15-20 বছরের জন্য। দীর্ঘকালীন সময়ে ইক্যুউটি রিটার্ন নির্ভর করে মূলতঃ কোম্পানির আয়ের উপর – EQUITY IS SIMPLY THE SLAVE OF THE EARNINGS. অর্থাৎ আপনার যে কোম্পানির শেয়ার আছে তার আয় যে হারে বাড়বে, আপনার শেয়ারের দামও সেই হারেই বাড়বে। আপনার যদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড থাকে তবে সেই পোর্টফোলিওতে যে সব কোম্পানি আছে তাদের আয় বাড়ার হারই হবে দীর্ঘকালীন সময়ে আপনার ফান্ডের NAV বাড়ার হার। দীর্ঘকালীন সময়ে ইক্যুউটি রিটার্ন জানার বা মাপার জন্য এর চাইতে বড় আর কোন সত্য নেই।
তবে ব্যাপারটাতো এত সহজ সরল ভাবে ঘটেনা – অনেক আনুষজ্ঞিক জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই বিষয়টি এগিয়ে চলে। কখনো শেয়ারের দাম সেই কোম্পানির আয়ের চেয়ে বেশী হারে বেড়ে যায়, কখনো আবার উল্টো ঘটনা ঘটে থাকে। এগুলি ঘটে থাকে মূলতঃ short-term প্রভাবক বিষয় গুলির জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেয়ার বা মিউচ্যুয়াল ফান্ড পোর্টফোলিওর বৃদ্ধির হার তার আয় বৃদ্ধির সাথে সজ্ঞতিপূর্ণ হতেই হবে। আপনারা খেয়াল করে থাকবেন অনেকেই তাঁদের পোষা কুকুরকে পার্কে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেন। তখন কুকুরটি ( পড়ুন শেয়ারের দাম ) তার প্রভুকে (এক্ষেত্রে সেই শেয়ারের আয় ) ছেড়ে বেশ কিছুটা এদিক ওদিক হয়তো চলে গিয়ে থাকে কিন্তু প্রভু পার্ক থেকে বেড়িয়ে যাবার সময় কুকুরটি সবসময় প্রভুর সাথেই থাকে। ঠিক তেমনই শেয়ার বা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম short-term এ তার আয়ের সাথে সঞ্জতিপূর্ণ না হলেও long-term এ তা হতেই হবে।
আপনার পোর্টফোলিওতে কি ধরনের শেয়ার আছে তার উপর নির্ভর করবে আপনার পোর্টফোলিওর রিটার্ন। সুসময়ে ছোট কোম্পানির বৃদ্ধির হার বড় কোম্পানির তুলনায় বেশী হয়,আবার দূঃসময়ে বড় কোম্পানির স্থিরতা বেশী থাকে। বিভিন্ন কোম্পানির বৃদ্ধির হার কি হতে পারে সেটা সম্পূর্ন ভিন্ন আলোচনার বিষয়বস্তু।মোটের উপর আমরা বিভিন্ন কোম্পানির গড় বৃদ্ধির হার 15% - 18% দেখে এসেছি অতীতে। তার জন্য আমাদের মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে 40% রিটার্ন প্রত্যাশা করা উচিৎ নয় ( যা দ্বিতীয় ব্যক্তির প্রত্যাশিত রিটার্ন ছিলো )। অতীতে বিভিন্ন মিউচ্যুয়াল ফান্ড সেই জন্য গড়ে 15% - 18% রিটার্ন প্রদান করে এসেছে। কিছু কিছু ফান্ড হয়তোএরচেয়ে কিছু বেশী বা কম রিটার্ন প্রদান করেছে এবং সেগুলিকে আমরা outperformer বা underperformer হিসাবে অভিহীত করে থাকি।
এবার আমরা আসি আমাদের শেষ প্রশ্নে। আগামী 10-15-20 বছর আমরা ইক্যুউটি থেকে কি ধরনের রিটার্ন প্রত্যাশা করতে পারি ? অর্থাৎ ঐ সময়কালে আমাদের দেশীয় কোম্পানি গুলির গড় বৃদ্ধির হার কি হতে পারে? কোন সংখ্যা দিয়ে বোধ হয় তাকে পরিমাপ করা ঠিক হবেনা। কারন আগামী 20 বছরের বৃদ্ধি অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করবে যা আজ বসে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। তবে সহজ সরল ভাবে এটুকু বলা যেতই পারে আর যাই হোক তাদের বৃদ্ধির হার অবশ্যই ফিক্সড অ্যাসেট ক্লাসের রিটার্নের থেকে বেশী হবে। যদি সুনিশ্চিত ভাবে তা না হতো তবে TATA, BIRLA, RELIANCE শিল্প না চালিয়ে ব্যাঙ্কে FD করে নিশ্চিন্তে বসে থাকতো। কিন্তু তাঁরা শিল্প চালিয়ে যাবেন কারন তাঁরা জানেন দীর্ঘকালীন সময়ে তাঁরা ফিক্সড অ্যাসেট ক্লাসের চেয়ে অনেক বেশী রিটার্ন শিল্প থেকে পাবেন ( একটা কোম্পানি তলিয়ে যেতেই পারে কিন্তু সমস্ত কোম্পানি একসাথে তলিয়ে যেতে পারেনা )।
শেষ পর্যন্ত সাজিয়ে গুজিয়ে এটুকুই বলা যেতে পারে ইক্যুউটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে ফিক্সড অ্যাসেটের চেয়ে কিছু বেশী রিটার্ন প্রত্যাশা করা যেতে পারে – অন্তত 2% - 5% এর তফাৎ সবসময়ই থাকা উচিৎ যা ছাড়া শিল্পপতিরা শিল্প চালাতে উদ্যোগী হবেননা। কিন্তু এটি কখনোই রাতারাতি বড়লোক হবার চাবিকাঠি হতে পারেনা।দীর্ঘকাল সংযমী আচারনের মাধ্যমেই একমাত্র এই বেশী রিটার্ন লাভ করা সম্ভব।